প্রকাশিত: Wed, May 17, 2023 4:19 PM
আপডেট: Wed, May 7, 2025 8:52 PM

রুশ নিষিদ্ধ তেল ইউরোপে রপ্তানি




 ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চায় ইইউরাশিদুল ইসলাম: পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা পাশ কাটিয়ে অনেক দিন ধরেই রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে অপরিশোধিত তেল কিনছে ভারত। এরপর সেই তেল পরিশোধন করে আবার ইউরোপের বাজারে বিক্রি করছে দেশটি। ভারতের এমন কার্যক্রমের দেশটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রধান কূটনীতিক জোসেপ বোরেল। আরটি

টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর জানিয়ে বলেছে, ইইউর এ বক্তব্য আসে জোসেপ বোরেলের সঙ্গে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের একটি বৈঠকের আগে। দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বোরেল বলেন, ‘রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল থেকে ভারত যদি ডিজেল অথবা গ্যাসোলিন তৈরি করে ইউরোপে পাঠায়, তাহলে সেটি অবশ্যই নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটানো। সদস্যদেশগুলোকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

মঙ্গলবার রাতে ভারত-ইইউ বাণিজ্য ও প্রযুক্তি কাউন্সিলের নির্ধারিত বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন জোসেপ বোরেল। এই প্রথমবারের মতো ইইউর কোনো কর্মকর্তা ভারতের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিলেন। রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে, তবে এতদিন কেউ এ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সরাসরি কথা বলেননি।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জোসেপ বোরেল বলেন, ‘রাশিয়া থেকে তেল কিনছে ভারত, এটা স্বাভাবিক ঘটনা। আমরা অপরিশোধিত তেলের দাম সীমিত করে দিয়েছি। ফলে, ভারত তুলনামূলক সস্তায় রাশিয়া থেকে তেল কিনছে। এটা ভালো। রাশিয়া যত কম টাকা পাবে, ততই ভালো। কিন্তু ভারত যদি রাশিয়ার তেল পরিশোধনের কেন্দ্র হয়ে যায় এবং পরিশোধিত সেই তেল আবার আমাদের কাছেই বিক্রি অব্যাহত রাখে, তাহলে এ বিষয়ে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।’

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বোরেলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তৃতীয় একটা দেশে রাশিয়ার তেলকে পরিশোধন করা হচ্ছে। ফলে, এটাকে (পরিশোধিত তেল) আর রাশিয়ার তেল হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। এজন্য আপনি ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রবিধানগুলো দেখুন।’

এর আগে সম্প্রতি ফিনল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার’র এক প্রতিবেদনে ভারতকে রাশিয়ার তেলের জন্য একটি ‘লন্ড্রোম্যাট’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। অর্থাৎ রাশিয়ার হয়ে তেল পরিশোধন করে বিক্রি করছে ভারত।

ভারতের তেল মন্ত্রণালয় প্রতিবেদনটির বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। তারা বলছে, পশ্চিমা কূটনীতিকেরা ‘বোঝাপড়ার অভাবের’ কারণে এমন দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করছেন। ভারত দীর্ঘ সময় ধরেই পরিশোধিত পণ্যের প্রধান রপ্তানিকারক দেশ। এটা জানা থাকলে এবং জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা ও সরবরাহের বিষয়ে ধারণা থাকলে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে কারও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকার কথা নয়।

ভারতের তেলমন্ত্রী হারদীপ সিং বলেছেন, ‘আমাদের প্রধান অঙ্গীকার নাগরিকদের প্রতি। আর একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে ভারত আন্তর্জাতিক আইনের শর্তাবলি মেনে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারে। ভারতের কোম্পানিগুলোও আইন অনুযায়ী স্বাধীনভাবে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকার তাদের বৈধ ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করবে না।’

ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর আগে রাশিয়া থেকে চাহিদার ১ শতাংশেরও কম পরিমাণে তেল আমদানি করত ভারত। কিন্তু গত কয়েক মাসে ভারতের শীর্ষ তেল সরবরাহকারী দেশ হয়ে উঠেছে রাশিয়া। অথচ গত এক দশকে ভারতের সবচেয়ে বড় তেল সরবরাহকারী দেশ ছিল ইরাক ও সৌদি আরব।

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম পরিশোধনের ক্ষমতা রয়েছে ভারতের কাছে। দেশটির বেসরকারি খাতের তেল পরিশোধকদের মধ্যে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও নায়ারা এনার্জি প্রধান তেল রপ্তানিকারক কোম্পানি। বিশ্লেষণী সংস্থা কেপলারের মতে, ভারত ইউরোপে পরিশোধিত তেলের শীর্ষ সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে। সেখানে প্রতিদিন ৩ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল তেল রপ্তানি করছে ভারত। সম্পাদনা: ইমরুল শাহেদ